পেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম - পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি

পেয়ারার বাগানে রোগ ও রোগের প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তারপর পেয়ারার বাগান করা উচিত। পেয়ারা আমাদের কাছে অত্যান্ত পরিচিত একটি ফল। পাশাপাশি এই ফল অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। তবে এই ফল অনেক রোগ যারা আক্রান্ত হয়।
আমরা অনেকেই এই রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানিনা, তাই এই আর্টিকেলে আমরা সে বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।এছাড়াও এই আর্টিকেলে পেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম - পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি ও পেয়ারা গাছের পরিচর্যা, ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ টপিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আপনি যদি উক্ত আলোচনাকৃত টপিক গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করি আপনি আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
সূচিপত্রঃপেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম - পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
.

পেয়ারা গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম-পেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম

পেয়ারা বা গুয়াভা আমাদের দেশে খুব পরিচিত এবং জনপ্রিয় ফল।পেয়ারা সাধারণত সবুজ বর্ণের বৈরী জাতীয় ফল। তবে এর প্রজাতি বা জাত ভেদে এর রং বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।আমাদের দেশে সবুজ ও লাল এই দুই রঙের পেয়ারা সচরাচর বেশি পাওয়া যায়।লাল রংয়ের পেয়ারা কে Maroon Guava বা লাল আপেল বলা হয়। পেয়ারা এর বৈজ্ঞানিক নাম হল:Psidium guajava।এটি Myteae গোত্রের অন্তর্গত।পেয়ারা এক ধরনের সবুজ বর্ণের বৈরি জাতীয় ফল। তবে সবুজ বর্ণ ছাড়াও, অন্যান্য বর্ণের ও পেয়ারা পাওয়া যায়।

পেয়ারা চারা রোপন পদ্ধতি

আমরা কমবেশি সবাই জানি যে সঠিক পরিচর্যা ও সঠিক নিয়মে ফসল ফলালে,ফসলের উৎপাদন ও বৃদ্ধি পায়। ঠিক একই ভাবে পেয়ারা চাষ করতে হলে, বেশি কিছু নিয়ম মেনে, পেয়ারা গাছ রোপন করতে হয়, বা চারা রোপন করতে হয়। নিম্নে পেয়ারার চারা রোপনের বেশ কিছু নিয়ম পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো।
  • প্রথমে ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া গর্ত করতে হবে।।
  • এক গর্ত থেকে অন্য গর্তের দূরত্ব হবে প্রায় ৩-৬ মিটার×৩-৬ মিটার।
  • তৈরিকৃত গর্তে ১০-১৫ কেজি গোবর সার বা কম্পোস্ট দিতে হবে।
  • ২৫০ গ্রাম টিএসপি সার ও ২৫০ গ্রাম পটাশ সার ভালোভাবে মাটির সাথে মেশাতে হবে।
  • এবং উক্ত সারগুলো ১০ থেকে ১৫ দিন গর্তে রেখে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  •  এরপর পেয়ারার গাছের চারা রোপন করতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে, একটি থেকে অন্যটির দূরত্ব ৩-৬ মিটার×৩-৬ মিটার এর কম বা বেশি যেন না হয়।

পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি

সাধারণত পেয়ারা গাছে দুই ভাবে স্যার প্রয়োগ করা হয়। পেয়ারা গাছ রোপনের পূর্বে গর্ত করে এবং পেয়ারা গাছের সেঁচ দেওয়ার সময়। পেয়ারা গাছে প্রথম সেচ দেওয়ার সময় গাছের গোড়ার মাটি আলগা করতে হবে। প্রতিটি গর্তে ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম ডিএপি এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার ভালোভাবে মিশিয়ে পেয়ারা গাছের মূল বা গোঁড়া থেকে ২ মি দুর দিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।

তবে অবশ্যই গাছের গোড়ায় সার দেওয়া যাবে না। গাছের গোড়ায় সার দেওয়ার কারণে অতিরিক্ত উর্বলতায় প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।এর ফলে পেয়ারা গাছ মারা যেতে পারে।
পেয়ারা গাছ রোপনের পূর্বে গর্ত করে সার দেওয়ার সময় কম্পোস্ট সার, টিএসপি সার,ও পটাশ সার একত্রে মিশিয়ে, ১০ থেকে ১৫ দিন মাটির নিচে রেখে দিতে হবে। তারপর উক্ত গর্তে পেয়ারা গাছ রোপণ করতে হবে। বছরে তিন কিস্তিতে পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ করা যায় এগুলো হলোঃ

  • ফাল্গুন মাসে পেয়ারা গাছে ফুল আসার সময়।

  • বৈশাখের শেষে এবং যষ্টির প্রথম দিকে পেয়ারা গাছে ফল ধরার সময়।

  • এবং ভাদ্র মাসের শেষে পেয়ারা গাছ থেকে ফল তোলার পর।

তাই আপনি যদি পেয়ারা চাষ করে থাকেন ,তাহলে বছরে এই তিন কিস্তিতে আপনার পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ করতে পারেন।

পেয়ারা গাছের পরিচর্যা

কোন ফসল ফলানোর প্রথম শর্ত হলো সঠিক পরিচর্যা। যেহেতু পেয়ারা একটি বারোমাসি ফল, এবং এই ফলের রোগ বালাই অন্য ফলে তুলনায় কয়েক গুণ বেশি হয়। তাই পেয়ারা গাছের প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ছাড়া, পেয়ারার বাগান থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেয়ারা উৎপন্ন করা প্রায় অসম্ভব। তাই পেয়ারা গাছের পরিচর্যা একান্ত জরুরি।পেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম

পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগের পর এবং খরার সময় বিশেষ করে পেয়ারা গাছে গুটি আসার সময়, পেয়ারার বাগানে সেঁচ দিতে হবে। এছাড়াও পেয়ারা গাছের গোড়া নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে,এবং মাটির ঢিলা ভেঙ্গে দিতে হবে। মাটির উর্বলতা দিকে লক্ষ্য রেখে সারের মাত্রা কম বেশি করতে হবে। বীজ বপনের মৌসুমের আগে যদি খরা হয়, তাহলে জমিতে সেঁচ দিতে হবে, এবং জো আসার পর বীজ বপন করতে হবে ।

পেয়ারার ফুল আসার সময়

আমাদের মধ্যে অনেকের মাথায় একটা প্রশ্ন জাগে,পেয়ারার ফুল আসার সময় কোনটি? যেহেতু পেয়ারা একটি সবুজ রঙের বৈরি জাতীয় ফল। তাই সাধারণত বছরের প্রায় সবসময়ই এই ফলকে পাওয়া যায়। তবে পেয়ারা গাছে ফুল আসার সঠিক সময় হলো ফাল্গুন মাসের শুরুর দিকে।

পেয়ারার জাতের নাম

আমাদের দেশে একটি পরিচিত ও জনপ্রিয় ফল হল পেয়ারা এর বৈজ্ঞানিক নাম হল:Psidium guaiava, সাধারণত এটি বৈরি জাতীয় ফল। পেয়ারার প্রায় ১০০ টি প্রজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কিছু উন্নত প্রজাতির পেয়ারা আমার দেশে খুবই জনপ্রিয় ও পরিচিত। এগুলো হলো
  • কাজী পেয়ারা
  • থাই পেয়ারা
  • বারি পেয়ারা-১
  • বারি পেয়ারা-২
  • বারি পেয়ারা-৩
  • বাউ পেয়ারা-১
  • বাউ পেয়ারা-২
  • বাউ পেয়ারা-৩
  • বাউ পেয়ারা-৪
  • বাউ পেয়ারা-৫
  • বাউ পেয়ারা-৬
এছাড়াও স্বরূপকাঠি, কাজী পেয়ারা, থাই পেয়ারা ইত্যাদি উচ্চ ফলনশীল জাত। প্রায় বছরের সব সময় চাষ করা যায়।

পেয়ারা গাছের রোগ ও প্রতিকার

পেয়ারা সাধারণত সারা বছর চাষ করা যায়। এবং এটি একটি বৈরী প্রজাতির ফল । পেয়ারা ফল উৎপাদনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি রোগ দেখা দেয় ।এসব রোগের মধ্যে রয়েছে প্লেয়ার ডিপ্লোমা জনিত ফল পচা রোগ,,ফ্লাইট রোগ, পাউডার মিলিটি রোগ,লাল মরিচা রোগ, স্কাব রোগ,

ফল শুকিয়ে যাওয়া , পেয়ারার ক্ষত রোগ, পেয়ারা শুটি মোল্ড রোগ ইত্যাদি রোগের কারণে আমাদের দেশে প্রায় বেশিরভাগ কৃষক পেয়ারার বাগান করে লোকসানের সম্মুখীন হয়। তাই পেয়ারার বাগান করার পূর্বে অবশ্যই পেয়ার রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে।

পেয়ারা গাছের কীটনাশক

পেয়ারা বাগানে ফল ছিদ্রকারী পোকার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। তাই ফল ছিদ্রকারী পোকার উপদ্রব কমানোর জন্য বা পেয়ারার ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে জন্য সবচেয়ে কার্যকরী কীটনাশক হলো সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন।

উক্ত কীটনাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ মিলিমিটার মিশিয়ে ১০ দিন পর পর আপনার বাগানে দুই থেকে তিনবার ভালো হবে স্প্রে করুন। এবং অবশ্যই কীটনাশক টি স্প্রে করার পরে সতর্কতা অবলম্বন করে ফল বাজারকরন করবেন।

পেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম - পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ শেষ কথা

পেয়ারা গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম,পেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম,পেয়ারা চারা রোপন পদ্ধতি,পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি পেয়ারা গাছের পরিচর্যা,পেয়ারার ফুল আসার সময়,পেয়ারা গাছের কীটনাশক,পেয়ারা গাছের রোগ ও প্রতিকার ,ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি।

আপনি যদি পেয়ারার বাগান করতে উদ্যোগী হন। তাহলে অবশ্যই আপনার সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নেওয়া উচিত। এবং এ বিষয়গুলো সম্পূর্ণ মাথায় রেখে পেয়ারার বাগানের দিকে অগ্রসর হওয়া একান্ত জরুরি।

সাধারণত যারা পেয়ারার বাগান করতে পছন্দ করে, তাদের উদ্দেশ্যে আজকের এই পোস্ট তৈরি করা হয়েছে।আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে পেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম - পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে।আশাকরি আপনারা পেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম,আর্টিকেল থেকে আপনাদের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সলভ্ এ টু জেড এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url