জন্ডিস কেন হয় ,জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার

আপনি কি জন্ডিসের সমস্যায় ভুগছেন। জন্ডিস কেন হয় ,জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। এবং জন্ডিস সম্পর্কে সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের এই আর্টিকালে আলোচনা করা হয়েছে, কিভাবে আপনি জন্ডিস এর প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করবেন।
এছাড়াও আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে জন্ডিস কেন হয় ,জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার, জন্ডিসের প্রকারভেদ, জন্ডিস হলে কিকরণীয় এবং জন্ডিস থেকে নিরাময়ের জন্য কোন কোন খাবার বেশি করে খেতে হবে, ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। আপনি যদি এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কের বিস্তারিত জানতে চান। তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করি আপনি আপনার কাঙ্খিত তথ্য পেয়ে যাবেন।
সূচিপত্রঃজন্ডিস কেন হয় ,জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার
.

জন্ডিস কেন হয় ,জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার

আমরা অনেকেই জন্ডিসকে এক ধরনে রোগ ভেবে থাকি। তবে প্রকৃতপক্ষে জন্ডিস কোন রোগ নয়। বরং এটি শুধুমাত্র রোগের সংক্রমণের লক্ষণ প্রকাশ করে। বাংলাদেশে জন্ডিস অত্যন্ত স্বাভাবিক ও সাধারণ সমস্যা হিসেবে পরিচিত। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শুরু করে ক্যান্সার ও অন্যান্য মহামারী রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে জন্ডিস দেখা দিতে পারে।

তাই জন্ডিস রোগকে স্বাভাবিক বা সাধারণ বিষয় ভেবে অবহেলা না করে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে । সাধারণত জন্ডিস রোগের প্রধান কারণ হলো রক্তে বিলুরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে, এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় বাধা প্রাপ্ত হলে ,জন্ডিস রোগ দেখা দেয়।
এছাড়াও যে কোন ভাইরাসে আক্রমণ করলে, অথবা রক্তের লোহিত রক্ত কণিকা একটি নির্দিষ্ট সময় পর ভেঙ্গে বিলিরুবিনের সৃষ্টি করে। এই বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলেও অনেক সময় জন্ডিস দেখা দেয়। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্য জন্ডিসের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি থাকে।এছাড়াও আরো বেশ কিছু কারণ রয়েছে জন্ডিস সৃষ্টি হওয়া জন্য।এবং সেগুলো নিম্নে পয়েন্ট আকারে দেওয়া হলো।
  • অন্যের ব্যবহৃত সিরিন্জ ব্যবহার করলে।
  • শরীলে ট্যাটু করলে। বিলিয়ারি সিরোসিস রোগের কারণে।
  • হেপাটাইটিস রোগে ভুগলে এবং হেপাটাইটিস রোগের টিকা গ্রহণ না করলে।
  • ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেও জন্ডিস দেখা দিতে পারে।
  • কিছু বিরল প্রজাতির জেনেটিক রোগ বা অটাোইমিউন ডিজিজের কারণেও এই রোগ হয়ে থাকে।

জন্ডিসের লক্ষণ

জন্ডিস জ্বরের মতই নির্দিষ্ট কোন রোগ নয়। এটি শুধুমাত্র রোগ প্রকাশের লক্ষণ বা উপসর্গত মাত্র। তাই জন্ডিসে আক্রান্ত হলে, অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। নিম্নে জন্ডিসের বেশ কিছু লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। উক্ত লক্ষণ গুলো যদি মিলে যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব জন্ডিস রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
  • জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর প্রস্রাব ও শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
  • একটু পরপরই বমি হওয়ার আশঙ্কা হতে পারে। আবার অনেক সময় বমিও হয়।
  • জন্ডিসের আক্রান্ত রোগীর শরীরে জ্বর জ্বর ভাব হতে পারে।
  • মাঝে মাঝে পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
  • জন্ডিস রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীর ফেকাশে হয়ে যায়। এবং রোগীর পায়খানা সাদাটে বা ফ্যাকাসে হতে পারে।
  • জন্ডিসের আক্রান্ত রোগীর শরীরের রস নেমে বা পানি জমে পা ফুলে যেতে পারে।
  • জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার কিছু কিছু মুহূর্তে রোগের পায়খানা আলকাতরা মত কালো দেখায়।

জন্ডিসের প্রকারভেদ

জন্ডিস মূলত কোন রোগ নয়। এটি শুধুমাত্র রোগ-প্রকাশের লক্ষণ মাত্র। আপনার শরীরে যদি জন্ডিস শনাক্ত করা হয়, তাহলে আপনাকে মনে করতে হবে। আপনার শরীরে ঝুঁকিপূর্ণ কোন রোগ প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।সাধারণত জন্ডিস কে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো
  • হেপাটিক জন্ডিস, এ
  • প্রি- হেপাটিক জন্ডিস
  • হেপাটিক জন্ডিস, বি
  1. প্রি- হেপাটিক জন্ডিসঃ এ ধরনের জন্ডিসে রোগির শরীরে বিলুরুবিন অতিরিক্ত মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে। যা রক্তের লাইসিন্স কোষ কে ধীর ধীরে খতি সম্পন্ন করে । এবং এর কার্যকারীতা হারিয়ে ফেলে।
  2. হেপাটিক জন্ডিস, এঃ মানব দেহের যকৃত টিস্যু হতে চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে রক্তের বিলিরুবিন এর মাত্রা অপসারণে ব্যর্থ হলে বা কার্যকরী না হলে , এ ধরনের জন্ডিস দেখা দেয়।এবং উক্ত সৃষ্টিকৃত জন্ডিসকে হেপাটিক জন্ডিস এ বলে।
  3. হেপাটাইটিসঃরোগীর শরীরের রক্ত থেকে অপসারিত বিলিরুবিন বের করে দেওয়ার জন্য, পরিপাকতন্ত্র কার্যকর ভাবে প্রবাহিত না হলে, অর্থাৎ বিলিরুবিন অপসারণ ব্যর্থ হলে। এ রোগটি হয়। এটি একটি রক্ত প্রবাহে ব্লকের ফলে হয়ে থাকে। এবং রোগীর শরীরের বিলিরুবিনের পরিস্রাবনের পরে যে জন্ডিস দেখা দেয়। সাধারণত তাকে আমরা হেপাটিক জন্ডিস ,বি বলি।

জন্ডিস হলে করনীয়

জন্ডিস একটি ছত্রাকবাহী রোগ। এবং বিভিন্ন মহামারী রোগের লক্ষণ প্রকাশের মাধ্যম। বিভিন্ন কারণে জন্ডিস রোগ প্রতিরোধ করা, অনেক সময় খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তবে এই সমস্যা সমাধানে ওষুধের তুলনায় নিয়ম-নীতি অনুসরণ ও অনুরুকরণ করায় বেশি কার্যকর। নিম্নে জন্ডিসের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার বেশ কিছু অনুকরণ অনুসরণ নিম্নে দেওয়া নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
  • যতদূর সম্ভব হেপাটাইটিস এর সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে হবে।
  • জন্ডিস সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে, অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালকোহল পান করা যাবে না।
  • একটু স্বাস্থ্যকর শরীর ও ওজনের সীমারেখা বজায় রাখতে হবে।
  • এবং জন্ডিস রোগে আক্রান্ত রোগীকে তার কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে, অর্থাৎ অত্যাধিক হারে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। এজাতীয় খাবার পরিত্যাগ করতে হবে।

জন্ডিস হলে কি খেতে হয়

তাজা ফলে প্রচুর পরিমাণে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার থাকে। যা লিভারের বিপাকীয় ক্ষতি হ্রাস করে ।ফলে লিভার দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়, এবং লিভারের বিলি রুবিন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এই উপাদান হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে ।হজমকে সহজতর করে তুলে।
ফটোকেমিক্যাল সমৃদ্ধ এবং নানা উপকারী উপাদান থাকায়, ফল মানুষকে লিভারের রোগ থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। অর্থাৎ লিভারের বিলিরুবিন নামক পদার্থ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে বিলিরুবিন নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পাঁচটি ফলের নাম দেওয়া হল ব্লুবেবি , আঙ্গুর, পেঁপে, বা মেলন পাতি লেবু এবং পা দিলে জাতীয় সাইট্রাস অ্যাসিডযুক্ত নানা ফল আভোকোডা।

জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়

আমরা সাধারণত মানুষের চোখ হলুদ হলে বা মুখের ফেঁস ফ্যাকাশে হলে। আমরা সেটিকে জন্ডিস বলে সনাক্ত করি ।তবে এই দুটি ছাড়াও জন্ডিসের আরও বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো হলো ক্ষুদা মন্দ ভাব, বমি বমি ভাব, হঠাৎ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা,। তীব্র বা মৃদু পেট ব্যথা, প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

এসব উপসর্গ। কারো দেহে দেখা দিলে অবশ্যই তাকে লিভার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এবং শারীরিক লক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জন্ডিস রোগের সঠিক চিকিৎসা দেন। 

বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়

জন্ডিস আমাদের কাছে একটি সাধারণ রোগ হিসেবে পরিচিত। তবে মজার বিষয় হচ্ছে জন্ডিস কোন রোগ নয়। বরংএটি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ মাত্র।সাধারণত আমাদের দেহে জন্ডিসের প্রধান কারণ হলোঃ দেহের শ্বেত রক্তকণিকা অত্যাধিক হারে ভেঙ্গে যায়। এবং রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে জন্ডিস সৃষ্টি হয় ।

এখন প্রশ্ন হলো বিলিরুবিনের মাত্রা বা ঘনত্ব কত হলে জন্ডিস হয় । চলুন সে বিষয়ে জানা যাক। একজন সুস্থ মানুষের রক্তে বিলুরুবিনের ঘনত্ব 1.2mg/dL এর নিচে থাকে। তবে বেলেরুবিনের মাত্রা যদি 3 mg/dL বা 50 মাইক্রো মোল পার লিটার এর চেয়ে বেশি হয়। তবে তা জন্ডিস হিসেবে শনাক্ত করা হয় ।

জন্ডিসের চিকিৎসা

জন্ডিস রোগের চিকিৎসার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে । ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন চিকিৎসা গ্রহণ করা যাবে না । কারণ কবিরাজি ও হারবাল চিকিৎসা এ রোগের আরও মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে । এ রোগের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলতে হবে ।যেমন পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম করতে হবে।

পরিমাণ মতো বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়াতে হবে । পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাবের পানি খেতে হবে । সহজ পাচ্য খাবার খাওয়াতে হবে। অতিরিক্ত মসলা এবং তেলে ভাজা খাবার পরিহার করতে হবে।

অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।ক্রনিক লিভার ডিসিস বা হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের ক্ষেত্রে জন্ডিস বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

জন্ডিস কেন হয় ,জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার -লেখক এর মন্তব্যঃ

আমাদের দেশে একটি কমন এবং সাধারন সমস্যা হলো জন্ডিস। যদিও এটি কোন রোগ নয়। তবে এটি ভাইরাস থেকে শুরু করে ক্যান্সার রোগ পর্যন্ত লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে। আপনার শরীরে যদি জন্ডিস শনাক্ত করা হয় ।তাহলে দ্রুত জন্ডিস বিশেষজ্ঞ বা লিভার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট হতে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

আজকের আর্টিকালে জন্ডিস কেন হয় ,জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার,জন্ডিসের প্রকারভেদ,জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়,জন্ডিসের চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।আপনি যদি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে থাকেন, তাহলে, আশা করি আপনি আপনার কাঙ্খিত তথ্য খুঁজে পেয়েছেন ।

আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন ,এবং প্রতিনিয়ত এরকম তথ্যপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে ভালোবাসেন। তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। এতক্ষন সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সলভ্ এ টু জেড এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url