পেয়ারা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
পেয়ারা ফল তার স্বাদ ও উপকারের বৈশিষ্ট্যের জন্য বেশ জনপ্রিয় এবং পরিচিত।বাকি সব ফলের মতো পেয়ারা ও স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ উপকারী। তবে পেয়ারা ফল অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে বিভিন্ন রোগের শিকার হতে পারেন। পেয়ারা ফল একটি ঠান্ডা জাতীয় ফল।পেয়ারা ফল স্বাদ ও উপকারী বৈশিষ্ট্যের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত।এই ফল পুষ্টিতে পরিপূর্ণ এবং বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের প্রতিষেধক বা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
কারণ একটি পেয়ারাতে লেবুর তুলনায় প্রায় দশ গুণ বেশি ভিটামিন এ রয়েছে, এবং একটি মাঝারি কমলার তুলনায় চার গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। যা আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তবে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় রয়েছে।এরকম পরিস্থিতিতে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে পেয়ারা খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ভিটামিন সি যুক্ত পেয়ারা ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও করে।তাই এ জাতীয় পরিস্থিতির শিকার হওয়ার পূর্বে অবশ্যই পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।বাকি সব ফলের মতো পেয়ারা ফলও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।
তবে যখন এই পেয়ারা ফল অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া হয়ে থাকে, তখন তা আমাদের শরীরে ক্ষতি করে। পেয়ারা ফলে রয়েছে অত্যাধিক পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে। এর ফলে আমাদের খাবার খুব সহজে হজম হয় না।তাই আপনি যদি বেশি পরিমাণে পেয়ারা খেয়ে থাকেন, তবে তরল খাদ্য গ্রহণের পরিমান বাড়াতে হবে।আজকে আমরা আপনাকে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো।
সূচিপত্রঃপেয়ারা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত.
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
পেয়ারা ফলে বিপুল পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের অভ্যন্তরে অবস্থিত বিভিন্ন রোগ ও রোগের জীবাণুর সাথে লড়াই করার শক্তি প্রদান করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পেয়ারা ফলের ব্যবহার
পেয়ারা ফলে রয়েছে লাইকোপেন, ভিটামিন সি , কেয়ারসেটিন ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীরের ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।এটি প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার সৃষ্টিতে প্রতিহত করে।
হার্ট সুস্থ রাখতে পেয়ারা ফলের ব্যবহার
নিয়মিত পেয়ারা ফল খেলে রক্ত চাপ ও রক্তের লিপিড কমে যায়। কারণ পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি রয়েছে। পেয়ারা ফলে উৎপাদিত পটাশিয়াম অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এছাড়াও নিয়মিত লাইকোপিন যুক্ত গোলাপী পেয়ারা খেলে, কার্ডিওভাসকুলার জনিত রোগের ঝুঁকি কমায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা ফলের ব্যবহার
চাইনিজ চিকিৎসা শাস্ত্রে বহু কাল ধরে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা ফলের ব্যবহার হয়ে আসছে। ১৯৮৩ সালে American journal of Chinese Medicine প্রকাশ করেন, পেয়ারা ফলের রসে থাকা উপাদানগুলো ডায়াবেটিস মেলাইটাস এর চিকিৎসায় খুবই কার্যকর অবদান রাখে। এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা পাতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেয়ারা গাছের কচি পাতা শুকিয়ে গুড়ো করে, গরম পানিতে অল্প পরিমাণে পেয়ারা পাতার গুড়া দিয়ে, মিনিট পাঁচেক ঢেকে রেখে তারপর পেয়ারা পাতার গুড়া যুক্ত পানি ছেঁকে নিয়ে পান করতে হবে। এই পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে পেয়ারা ফলের ব্যবহার
বিভিন্ন ঠান্ডা জনিত রোগ বা সমস্যা যেমন ব্রংকাইটিস নিরাময় করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে পেয়ারা ফল। পেয়ারাতে রয়েছে উচ্চমাত্রার আয়রন এবং ভিটামিন সি, যা আমাদের দেহে শ্লেষ্মা কমিয়ে দেয়।তবে কাঁচা পেয়ারা এর সমস্যা দূর করতে তুলনামূলক বেশি কার্যকর।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা ফলের ব্যবহার
পেয়ারা ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ এই ফলের অভ্যন্তরে পটাশিয়াম রয়েছে। যা আমাদের দেহের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে পেয়ারা ফলের ব্যবহার
পেয়ারা ফলে রয়েছে ভিটামিন এ, যা চোখের জন্য উপকারী। পেয়ারা ফল উপস্থিত ভিটামিন এ আমাদের চোখের কর্নিয়া কে সুস্থ রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আপনি যদি ভিটামিন এ জনিত কোন সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাহলে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা ফল রাখুন। কাঁচা পেয়ারা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এর যোগান দেয়।
মাসিক ব্যথা নিরাময় পেয়ারা ফলের ব্যবহার
অনেক মহিলারাই মাসিক কালীন পেট ব্যথা সমস্যার শিকার হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য অনেকেই পেট ব্যথার ওষুধ খেয়ে থাকেন। তবে এ সমস্যার সমাধানে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে পেয়ারা পাতা । আপনি যদি এ সমস্যায় ভোগে থাকেন, তাহলে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে এর রস খান। আশা করি আপনি অনেকটা মাসিক পেট ব্যথার হাত থেকে মুক্তি পাবেন।
পেয়ারা ফল খাওয়ার অপকারিতা
অন্যান্য ফলের মতই পেয়ারা ফল স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।তবে এই ফল বেশি মাত্রায় খাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা ও রোগের শিকার হতে পারেন।চিকিৎসা বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের মতে, পেয়ারা ফল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে এই ফল অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে, সর্দি কাশির সংক্রমণ, পেট ফোলা,এজমার আক্রমণ সহ আরো বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
পেয়ারা ফলে বিপুল পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা আমাদের হজম ক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই আপনি যদি পেয়ারা ফল অতিরিক্ত মাত্রায় খেয়ে ফেলেন, তাহলে তরল খাদ্য খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে নিন।
আজকের আর্টিকেল এর মূল আলোচনার বিষয় হলো পেয়ারা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা। এখন আমরা পেয়ারা ফলের অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
সর্দি- কাশির আশঙ্কা
যেসব ব্যক্তিরা স্বাভাবিক ব্যক্তির তুলনায় বেশি সর্দি এবং কাশি সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাদের পেয়ারা ফল খাওয়া এড়ানো উচিত।কারণ পেয়ারা ফল একটি ঠান্ডা জাতীয় ফল। এই ফল বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে সর্দি এবং কাশি বাড়তে পারে ।তাই যারা প্রায়ই সর্দি এবং কাশি সমস্যাই ভোগেন তাদের পেয়ারা খাওয়া এড়ানো একান্ত জরুরী।
গর্ভবতী মহিলাদের পেয়ারা ফল বেশি খাওয়া উচিত নয়।
গর্ভবতী এবং নবজাতক শিশু জন্মদানকারী মহিলাদের পেয়ারা ফল বেশি মাত্রায় খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এর প্রধান কারণ হলো পেয়ারা ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে , যা হজম প্রক্রিয়ায়কে বাধা প্রদান করে।এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই গর্ভবতী বা নবজাতক শিশুর জন্মদানকারী মহিলা অতিরিক্ত মাত্রায় পেয়ারা খেলে, বাচ্চার হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে
আপনি যদি শারীরিক স্বাস্থ্য জনিত কোন সমস্যায় ভোগে থাকেন, তাহলে অবশ্যই পেয়ারা খাওয়া থেকে বিরত থাকায় আপনার জন্য উত্তম। পেয়ারাতে রয়েছে পটাশিয়াম, ফাইবার, লাইকোপিন জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ।আপনি যদি স্বাস্থ্য গত সমস্যার জন্য ডায়েট করে থাকেন ,তবে পেয়ারা ফলকে আপনার ডায়েটের অন্তর্ভুক্ত করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
পেয়ারা পাতার অপকারিতা
শুধুমাত্র পেয়ারা নয়, অতিরিক্ত হারে এর পাতা খাওয়ার ফলে আপনি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।কারণ পেয়ারা পাতা অপব্যবহারের ফলে রক্তস্বল্পতা, মাথা ব্যথা কিডনির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
পেট খারাপ হতে পারে
পেয়ারা ফল বেশি খাওয়ার ফলে পেটের বিভিন্ন রোগ ও জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি আপনার পাঁচটি সিস্টেমের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এই ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে ফাইবার থাকায় হজম শক্তি দুর্বল করতে শুরু করে।
পেট ফুলতে সাহায্য করে
অতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা ফল খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। পেয়ারা ফলের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি এবং ফাইবার থাকে। যা আমাদের কাছে ফ্রুটোজ হিসেবে পরিচিত।এটি আমাদের শরীরের হজম এবং শোষণ প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদান করে। ফলে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে খাদ্যগুলো হজম না হয়ে এক প্রকার গ্যাসের সৃষ্টি করে। এবং পরবর্তীতে আমাদের পেট ফুলে যায় বা প্রচন্ড গ্যাস সৃষ্টি হয়।
দাঁতের ব্যথা সৃষ্টিতে পেয়ারার ভূমিকা
অনেকে পাকা পেয়ারা খেয়ে থাকেন কারণ পাকা পেয়ারা অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। আবার অনেকে এই পাকা পেয়ারা কে রান্না করে খেয়ে থাকেন।তবে রান্না করে খাওয়ার ফলে আপনার দাঁত ব্যথা এবং দাঁত জনিত বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই যাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত মাত্রায় পাকা পেয়ারা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি খাওয়ার ফলে আপনার দাঁতের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
একজিমার ঝুঁকি সৃষ্টিতে পেয়ারার অবদান
পেয়ারা পাতার রস খাওয়ার ফলে একজিমা হতে পারে। পেয়ারা গাছের পাতা ত্বকে জ্বালা ভাব সৃষ্টি করে।আপনি যদি একজিমা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে সাবধানতার সাথে এবং নিজ দায়িত্বে পেয়ারা পাতার রস ব্যবহার করবেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের পেয়ারা ফল খেতে দেবেন না
অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগীদের পেয়ারা ফল খাওয়ানোর থেকে বিরত থাকুন।কারণ অতিরিক্ত পেয়ারা ফল খাওয়ার ফলে রক্তের শর্করা কমে যায়। আপনি যদি পেয়ারা খেতে পছন্দ করে থাকেন এবং আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই পেয়ারা খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এবং রক্তে চিনির পরীক্ষা করে নির্দিষ্ট পরিমাণ পেয়ারা ফল খেতে পারেন।
সলভ্ এ টু জেড এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url