ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ-ধানের মাজরা পোকার আক্রমন প্রতিরোধের উপায়
আপনার ধান ক্ষেতে কি মাজরা পোকা আক্রমণ করেছে।আপনি হয়তো ধানের মাজরা পোকার আক্রমণকে সাধারণ বলে অবহেলা করতে পারেন। তবে ধান ক্ষেতে মাজরা পোকার আক্রমণ মোটেও সাধারণ নয়।চলুন ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ-ধানের মাজরা পোকার আক্রমন প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা যায়।
আপনি যদি ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।আজকের আর্টিকেলে ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ-ধানের মাজরা পোকার আক্রমন প্রতিরোধের উপায় ছাড়াও ধানের মাজরা পোকার বাসস্থান, ডিম দেওয়ার সময় এবং ধানের মাজরা পোকা নিয়ন্ত্রণে রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার সহ আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আপনি যদি এসব গুরুত্বপূর্ণ টপিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান বা জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
সূচিপত্রঃধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ-ধানের মাজরা পোকার আক্রমন প্রতিরোধের উপায়
.
মাজরা পোকা
তিন ধরণের মাজরা পোকা বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি করে ।এগুলো হল- হলুদ মাজরা পোকা
- কালো মাজরা পোকা
- গোলাপি মাজরা পোকা
সাধারণত মাজরা পোকার আক্রমণ ধান ক্ষেতের বেশি ক্ষতি সাধন করে।ধান গাছের শীষ আসার পূর্বে এই ধরনের ক্ষতি হলে মরা-ডিগ দেখতে পাওয়া যায়। তবে ধান গাছের থোড় আসার পূর্বে মরা-ডিগ দেখা দিলে,অতিরিক্ত কিছু কুশি উৎপাদন করে ফসলের ক্ষতি অনেকটাই পূরণ করতে পারে।
ক্রিসেক রোগের ক্ষত এর নমুনার সাথে অনেক সময় ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ মিলে যেতে পারে বা মরা-ডিগ বলে ভুল হতে পারে। মরা-ডিগ টান দিলে খুব সহজেই উঠে আসে। এছাড়াও এ রোগে ক্ষতিগ্রস্ত গাছের কান্ডে পোকা দ্বারা খাওয়ার ছিদ্র এবং ছিদ্রে পোকার মল দেখতে পাওয়া যায়। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন হতে পারে ক্রিসেক কী ? চলুন সে বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।ক্রিসেক হলো ইঁদুর দ্বারা সৃষ্টি ফসলের ক্ষতিকে ক্রিসেক বলে।
মাজরা পোকা দ্বরা আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
সাধারণত ধানের শীষ আসার পর ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ প্রকাশ করলে বা আক্রমন করলে, ফসলের শীষ সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। একে আমরা অনেক সময় সাদা শীষ, মরা শীষ বা হোয়াইট হেড বলে থাকি।
- প্রচন্ড খরায় সৃষ্ট ক্ষতি বা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনা হোয়াইট হেড এর মত দেখা যেতে পারে।
- মাজরা পোকার কীড়া যদি পাতার খোলের ভেতরে খায় এবং কান্ডের ভেতরের অংশ কোন প্রকার ক্ষতি না করে বা শীষ কেটে না দেয় তাহলে ধান গাছের তেমন ক্ষতি পরিলক্ষিত হয় না। শুধুমাত্র ধান গাছের শীষের গোড়ার অংশের দিকে সামান্য অংশ চিটায় পরিণত হয়।
- মাজরা পোকার আক্রমণ হলে, কাণ্ডের মধ্যে মাজরা পোকার কীড়া, কীড়া দ্বরা ফসল খাওয়ার নিদর্শন ও মাল পাওয়া যায়।
- কাণ্ডের বাহিরে বর্ণ বিবর্ণ হয়ে যায় এবং মাজরা পোকার কীড়া বের হয়ে যাওয়ার ছিদ্র থাকে।
মাজরা পোকার ডিম পাড়ার স্থান।
ধান গাছে মাজরা পোকার ডিমের গাদা দেখলে বুঝতে হবে ধান গাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার অবশ্যই আপনার ধানক্ষেত পর্যালোচনা করার সময় এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন।নিম্নে মাজরা পোকার ডিম পাড়ার স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
- হলুদ মাজরা পোকা ধান গাছের পাতার উপরের অংশে ডিম পাড়ে।
- গোলাপি মাজরা পোকা ধান গাছের পাতার খোলের ভেতরে ডিম পাড়ে।
- হলুদ মাজরা পোকা ডিমের গাধার উপর হালকা ধূসর রঙের একটা আবরণ থাকে। এবং এরা পাতার উপরের অংশে ডিম পাড়ে।
- কালো মাথার মাঝরা পোকার ডিমের গাদার উপরের অংশে মাছের আষের মত একটা সাদা আবরণ বিদ্যমান থাকে, যা ডিম ফোটার পূর্ব মুহূর্তে ধীরে ধীরে গাড়ো রং ধারণ করে।এরা সাধারণত পাতার খোলের ভেতরে ডিম পাড়ে, তবে অনেক সময় এদের ডিম পাতার উপরের অংশে দেখা যায়।
মাজরা পোকার বাসস্থান
ধানের মাজরা পোকার আক্রমনের লক্ষণগুলোর মধ্য মাজরা পোকার বাসস্থান অন্যতম।মাজরা পোকার কীড়া গুলো ডিম ফুটে বের হওয়ার পর, আস্তে আস্তে ধান গাছের কান্ডের ভিতরে প্রবেশ করে।এই ক্রীড়া প্রাথমিক অবস্থায় এক একটি ধান গাছের মধ্যে অনেকগুলো করে কালো ও গোলাপি মাজরা পোকার কীড়া, দলবদ্ধ হতে দেখা যায়। কিন্তু হলুদ মাজরা পোকার কীড়া গুলো কান্ডের মধ্যে যে কোন জায়গায়,যে কোন অবস্থায় দেখা যেতে পারে।ধানের মাজরা পোকার আক্রমন প্রতিরোধের উপায়
মাজরা পোকার ডিম পাড়ার সময়
আপনার ধানক্ষেতে যদি কোন প্রকার আলোর ব্যবস্থা থাকে, তাহলে আলোর চারপাশে প্রচুর পরিমাণে মাজরা পোকার মত দেখা যায়। আর এরকম পরিবেশ সৃষ্টি হলে বুঝতে হবে ক্ষেতের মধ্যে মাজরা পোকা গুলো ডিম পাড়া শুরু করেছে।ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ
ধানের মাজরা পোকার আক্রমন প্রতিরোধের উপায়
নিয়মিত ভাবে আপনার ধানক্ষেত পর্যবেক্ষণের সময় মাজরা পোকার মত, পুত্তলি, ডিম সংগ্রহ করে নষ্ট করলে ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ, মাজরা পোকার আক্রমণ, মাজরা পোকার বৃদ্ধি এবং মাজরা পোকা সংখ্যায় অনেকটা কমে যায়।ধানের কাইচ থোড় আসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত হাতজাল ব্যবহার করে,মাজরা পোকার মত ধ্বংস করা যায়।
- ধানক্ষেতের মাঝে মাঝে পাখি বসার জায়গা করে দিলে, ধানক্ষেত থেকে মাজরা পোকার সংখ্যা অনেকটা কমে যায়। কারণ পাখি ধান ক্ষেতের পূর্ণবয়স্ক মাজরা পোকা ও মাজরা পোকার মত খেয়ে ফেলে।
- ধানক্ষেতে পূর্ণবয়স্ক মাজরা পোকার মত এর উপদ্রব বৃদ্ধি পেলে, ধান ক্ষেত থেকে প্রায় 200 - 300 মিটার দূরে আলোক ফাঁদ পেতে রাখতে পারেন। এই আলোক ফাঁদের মাধ্যমে মাজরা পোকার মত সংগ্রহ করে খুব সহজেই মেরে ফেলা যায়।
- যেসব এলাকায় হলুদ মাজরা পোকার আক্রমণ বেশি দেখা দেয়। সেসব এলাকায় চন্দ্রিনার( বি আর-১) জাতের ধান রোপন করতে হবে।কারণ এ জাতের ধান হলুদ মাজরা পোকার আক্রমণ প্রতিরোধি।তাই এসব ধানে হলুদ মাজরা পোকা আক্রমণ করে না।
- আপনার ধান ক্ষেতে যদি শতকরা ১০-১৫ শতাংশ ডিগ রোগে আক্রান্ত হয়। অথবা শতকরা পাঁচ শতাংশ ধানের শীষ মারা যায়। তাহলে নির্দিষ্ট মাত্রায় অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। যেমন- ডায়াজিনন ৬০ ইসি, কার্বোফুরান ৫ জি ,ফেনিট্রথিয়ন ৫০ ইসি ইত্যাদি।
ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
আপনার ধান ক্ষেত মাজরা পোকা দ্বারা আক্রান্ত হলে।ধান ক্ষেতে ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ দেখা দেয়। আপনার ধানক্ষেত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার সময় অবশ্যই ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ গুলোর প্রতি সজাগ থাকতে হবে। দরকার হলে ধানের মাজরা পোকার আক্রমন প্রতিরোধের উপায় গুলো প্রয়োগ করতে হবে।
ধানের মাজরা পোকা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকারী পদ্ধতি হলো আলোর ফাঁদ এর ব্যবহার। এটি ব্যবহার করে, খুব সহজে প্রচুর পরিমাণ মাজরা পোকার মত কে মেরে ফেলা সম্ভব।এ পদ্ধতি ব্যবহার করেও আপনি যদি মাজরা পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তাহলে বাজারে মাজরা পোকা প্রতিরোধে বেশ কিছু কীটনাশক পাওয়া যায়, সেগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ মতো ব্যবহার করতে পারেন।
আশা করি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। এবং ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
সলভ্ এ টু জেড এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url