ধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায়-কারণ,লক্ষন,কীটনাশক,প্রতিকার

আমাদের দেশে ধানের বাদামী দাগ একটি পরিচিত ছত্রাক জনিত রোগ। এ রোগটি আমাদের দেশের কৃষকদের কাছে একটি আতঙ্কের নাম কারণ প্রতিবছর এই ছত্রাক জনিত রোগের প্রচুর পরিমাণে ফসল নষ্ট হয়,যার ফলে হাজার হাজার কৃষক ক্ষতি সম্মুখীন হয়। আপনি যদি সে কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত না হতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে ধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
ধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায় ছাড়াও ধানের বাদামী দাগ এর কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি ধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায় সহ উক্ত তথ্যগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।একজন কৃষকের ধানের বাদামী দাগ দূর করতে যতটুকু তথ্য জানা প্রয়োজন, তার সবটুকুই আলোচনা করা হয়েছে।তাই আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন, তাহলে আপনি অনেক উপকৃত হবেন “ইনশাআল্লাহ”
সূচিপত্রঃধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায়-কারণ,লক্ষন,কীটনাশক,প্রতিকার
.

ধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায়

ধানের বাদামী রোগ একটি মারাত্মক ছত্রাক জনিত রোগ।এ রোগের প্রাথমিক আক্রমণে পাতার মাঝে ছোট ছোট তিলের দানার নেয় বাদামী বর্ণের দাগ সৃষ্টি হয়, এবং পরবর্তীতে এই দাগ গুলো ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে এবং দাগ গুলো সাদাটে বর্ণে রূপান্তরিত হয়। দাগগুলোর কিনারা দিয়ে বাদামী বর্ণ দেখা যায়।
এ রোগে আক্রমণের সর্বশেষ পর্যায়ে সম্পূর্ণ পাতাটি দাগে পরিণত হয় এবং পাতাটি মারা যায়, ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।এ রোগ মূলত বায়ু চলাচলের মাধ্যমে এক গাছ থেকে অন্য গাছে চলাচল করে। এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলোঃ
  • আক্রান্ত জমিতে বীজ বপন করা।
  • ধানের পুষ্টিগত উপাদান গুলোর অভাব।
  • ধান ক্ষেতের আগাছা মুক্ত না করা।
ধানের বীজে ধানের বাদামী দাগ সৃষ্টিকারী ছত্রাক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, তাই এগুলো বাজারজাত করা বা বপনের সময় ভালো করে পরিশোধন করুন।

উপরোক্ত ধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায় গুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু পদ্ধতি এই আর্টিকেলে বলা হয়েছে তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করি আপনি ধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে আপনার কাঙ্খিত তথ্য পেয়ে যাবেন।

ধানের বাদামী দাগ এর কারণ

ধানের বাদামী দাগ এর কারণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।তবে সাধারণত Cochliobolus miyabeanus ছত্রাক দ্বারা আক্রমণের ফলে, ধানের বাদামী দাগ প্রকাশিত হয়।Cochliobolus miyabeanus ছত্রাকটি ফসলের বীজে অনেক লম্বা সময় পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে।এবং বায়ু চলাচলের মাধ্যমে এক গাছ হতে অন্য গাছে ছড়িয়ে যেতে পারে।

এছাড়াও ধানের বাদামী দাগ যুক্ত রোগ বৃদ্ধির প্রধান কারণ ধানক্ষেতে পড়ে থাকা ধানের বাদামী দাগ যুক্ত রোগে আক্রান্ত ধানের অবশিষ্ট অংশ,ধান-ক্ষেতের আগাছা,এবং বায়ু।ধানের বাদামী দাগ যুক্ত রোগের বিস্তার,মৌসুমে প্রায় সবসময়ই হয়ে থাকে, তবে ধানের চারার কুশি হওয়ার সময় থেকে ধান পাকা পর্যন্ত সময়ে এ রোগের তুলনামূলক বিস্তারের হার বেড়ে যায়।
ধানের বাদামী দাগ যুক্ত রোগ ধানের চারা অথবা ধান গাছে, তখনই আক্রমণ করে যখন ধান গাছ পুষ্টির অভাবে ভোগে। বিশেষ করে কোন অনু খাদ্যের অভাবে ভুগে থাকলে, এরকম পরিস্থিতিতে সিলিকন যুক্ত স্যার ব্যবহার করে ধানের বাদামী দাগ যুক্ত রোগকে অনেকাংশে দমন করা সম্ভব।

ধানের বাদামী দাগের কারণ কোন জীব?

ধানের বাদামী দাগ একটি মারাত্মক ও ক্ষতিকর ছত্রাকের আক্রমণের ফলে হয়ে থাকে।মূলত ধানক্ষেতের কুশি অবস্থা থেকে শুরু করে ধান পাকা পর্যন্ত, এর উপদ্রব এবং বিস্তার বৃদ্ধি পায়।ধানের বাদামী রোগের কারণ হলো Cochliobolus miyabeanus নামক ছত্রাক।যার আক্রমণে ধান গাছের পাতায় বাদামী বর্ণের ফোসকা বা দাগ সৃষ্টি হয়, এবং ধীরে ধীরে এর আক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ধানের বাদামি দাগের লক্ষণ?

যেহেতু ধানের বাদামী দাগ একটি ছত্রাক ও জনিত রোগ, তাই এ রোগের লক্ষণ কয়েক ভাবে প্রকাশ পেতে পারে। নিচে তা দেওয়া হলো।
  • এই রোগের আক্রমণের ফলে ধান গাছের পাতায় প্রথমে তিলের দানায় ছোট ছোট বাদামী দাগ সৃষ্টি হয়।
  • পরবর্তীতে ছোট ছোট বাদামি দাগ গুলো বৃদ্ধি পেয়ে বড় গোলাকৃতি দাগের সৃষ্টি করে।
  • দাগের মধ্যবর্তী স্থানে অনেক সময় সাদাটে এবং পাতার কিনারায় বাদামি বর্ণের সৃষ্টি হয়।
  • ধানের বাদামী দাগ রোগে আক্রান্ত হওয়ার শেষ পর্যায়ে, একাধিক দাগগুলো মিলিত হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে।এবং ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ পাতাটি দাগে পরিণত হয়।ফলে ধান গাছটি মারা যায়।
  • যদি এই রোগ ধানের শীষ আক্রান্ত করে।তাহলে ধানক্ষেতে অপরিপূর্ণ ও বিকৃত শস্যদানা বা ধান দেখতে পাওয়া যায়। এবং ধানের গুণগত মান হ্রাস পায়।

ধানের বাদামী দাগ এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সম্ভব হলে ধানের বাদামী দাগ যুক্ত রোগ বা ছত্রাক প্রতিরোধী জাত রোপন করুন।
  • ধানক্ষেতের মাটিতে সিলিকনের পরিমাণ কম থাকলে, ধান রোপনের পূর্বে ক্যালসিয়াম সিলিকেট এর গাদ ব্যবহার করুন।
  • আক্রান্ত ধান ক্ষেত হতে বীজ সংগ্রহ থেকে বিরত থাকুন।
  • যদি আপনার অঞ্চলে বিভিন্ন উন্নত ধানের জাত পাওয়া যায়,তাহলে এ রোগ প্রতিরোধী ধান রোপন করুন।

  • যেহেতুৢ ধানের বা ফসলের পুষ্টির অভাবের কারণে এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে,তাই সুষম পুষ্টির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এবং নিয়মিত ধানক্ষেতের পুষ্টি উপাদান পরীক্ষা করতে হবে।
  • ধানের কুশি গজানোর সময় থেকেই ধানের বাদামী দাগ যুক্ত রোগের লক্ষণ গুলো পর্যালোচনা করতে হবে।
  • ধান ক্ষেতের মধ্যে এবং ক্ষেতের আশেপাশের আগাছা ও আবর্জনা অপসারণ করতে হবে।
  • ধানক্ষেত হতে ফসল উত্তোলনের পর, এ রোগে আক্রান্ত গাছগুলিকে উপড়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

ধানের বাদামী রোগের প্রয়োজনীয় সাবধানতা

 ধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায় বা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় সাবধানতা হলো আক্রান্ত ধান ক্ষেত হতে বীজ সংগ্রহ করবেন না।

ধানের বাদামী রোগ নিয়ন্ত্রণে করণীয়

  • ধানক্ষেত রোপনের জন্য রোগমুক্ত ধানের বীজ ব্যবহার করুন।
  • বীজ বপনের পূর্বে বাছাইকৃত বীজকে ভালো হবে শোধন করুন।
  • ফসল কাটার পর আক্রান্ত ধান ক্ষেত ও তার আশেপাশের ধান ক্ষেতের নাড়া ও খড় পুড়িয়ে দিন।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ বা ধানের বাদামী দাগ রোগের কীটনাশক

আপনার ধান ক্ষেতে যদি ধানের বাদামী দাগ যুক্ত রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তাহলে বিভিন্ন ছত্রাকনাশক নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করুন। যেমনঃ কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের এমকোজিম ৫০ ডব্লিউ পি, একরাম নোইন ৫০ ডব্লিউ পি ২ গ্রাম এবং কন্টাফ ৫ ইসি প্রতি ১ লিটার পরিমাণ পানিতে এক মি,লি পানিতে ভালো ভাবে মিশিয়ে স্প্রে করুন।

ধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায়-কারণ,লক্ষন,কীটনাশক,প্রতিকার শেষ কথা

ধানের বাদামী দাগ যুক্ত রোগ একটি ছত্রাক জনিত রোগ।আজকের আর্টিকেলে ধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায়,ধানের বাদামী দাগ হওয়ার কারণ, ধানের বাদামী দাগ দূর করার কীটনাশক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। এবং ধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করেছেন ।

আশা করি, “ধানের বাদামী দাগ দূর করার উপায়” আর্টিকেল আপনার উপকারে এসেছে। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ কৃষি বিষয়ক তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সলভ্ এ টু জেড এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url