গামবোরো রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
ব্রয়লার মুরগির গামবোরো রোগ অত্যান্ত মারাত্মক একটি রোগ। এ রোগের কারণে আমাদের দেশে ব্রয়লার মুরগির খামারিরা প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন । এর প্রধান কারণ হলো, এ রোগ সম্পর্কে অনেক খামারিদের সুস্পষ্ট ধারণা নেই।
আপনি কি সেই সব খামারীদের দলভুক্ত? তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন ,আজকের এই আর্টিকেলে গামবোরো রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।গামবোরো রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা ছাড়াও এই আর্টিকেলে গামবোরো রোগের প্রতিকার ,প্রতিরোধ ও ভ্যাকসিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আপনি যদি এইসব গুরুত্বপূর্ণ টপিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করি এই আর্টিকেল এর যাবতীয় তথ্য আপনাকে আপনার ব্রয়লার মুরগির খামারকে গামবোরো রোগ প্রতিরোধী হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। “ইনশাআল্লাহ”
সূচিপত্রঃগামবোরো রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
.
মুরগির গামবোরো রোগ
মুরগির গামবোরো একটি মারাত্মক ভাইরাস জনিত রোগ।আমাদের দেশের ব্রয়লার মুরগির খামারিদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল মুরগির রোগ।বিভিন্ন ক্ষতিকর ও মারাত্মক রোগের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় হাজার হাজার খামারিরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। সেই সব রোগের মধ্যে গামবোরো অন্যতম। সাধারণত ব্রয়লার মুরগির বয়স যখন দুই মাস বা তার চেয়ে বেশি হয়, তখন সাধারণত গামবোরো রোগ আক্রমণ করে।
গামবোরো রোগএতটাই মারাত্মক যে সঠিক সময়ে এ রোগের চিকিৎসা প্রদান না করলে, সম্পূর্ণ ব্রয়লার মুরগির খামার ফাঁকা হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ খাবারের সকল মুরগি মারা যেতে পারে।তাই যত দ্রুত সম্ভব গামবোরো রোগের লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে, গামবোরো রোগকে চিহ্নিত করে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
তাহলে এ রোগের আক্রমণের হাত থেকে মুরগির খামারকে অনেকটা মুক্ত রাখা সম্ভব হবে।গামবোরো রোগটি ১৯৬২ সালে আমেরিকার গামবোরো নামক স্থানে প্রথম শনাক্ত করা হয়। এবং সেই স্থানের নাম অনুসারে, এই রোগের নাম দেওয়া হয় গামবোরো।গামবোরো রোগ মুরগির লসিকা গ্রন্থির বার্সাকে আক্রান্ত করে,তাই এর নামকরণ করা হয় ইনফেকসাস বার্সাল ডিজিজ।
ব্রয়লার মুরগির গামবোরো রোগ এক ধরনের ভাইরাস জনিত রোগ।এটি বিরনা নামক ভাইরাসের আক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। যদিও এই ভাইরাসের দুটি ভিন্ন ভিন্ন সেরোটাইপ আছে। এদের মধ্যে একটি( সেরোটাইপ-১) পোল্ট্রি বা ব্রয়লার মুরগির জন্য ক্ষতিকর। বিরনা ভাইরাস ব্রয়লার মুরগির বার্সা ফেব্রিসিয়াসকে আক্রান্ত করে।
এর ফলে ব্রয়লার মুরগির শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে,এবং খাদ্য রূপান্তরের দক্ষতা কমে যায়।গামবোরো রোগের আক্রমণে সাধারণত ব্রয়লার মুরগির খামারের প্রায় 30% মুরগি মারা যায়। তবে মারাত্মক পরিস্থিতিতে এর সংখ্যা বৃদ্ধি ও পেতে পারে।আজকের আর্টিকেল এর মূল আলোচনার বিষয় হলো গামবোরো রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা,চলুন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
মুরগির গামবোরো রোগের কারণ
গামবোরো রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে গামবোরো রোগের কারণ সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি তাই প্রথমে সে বিষয়ে আলোচনা করা যায়।গামবোরো একটি ভয়ংকর ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। এ রোগ সাধারণত গামবোরো রোগে আক্রান্ত মুরগি থেকে, আশেপাশের মুরগির দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
এবং খুব দ্রুত মুরগির পুরো দেহে বিস্তার লাভ করে। যেহেতু গামবোরো একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ, তাই এ রোগের ভাইরাস খুব দ্রুত এবং সহজে এক খামার থেকে অন্য খামারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।এছাড়াও খামারের বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে এ রোগের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। সেগুলো নিম্নে দেওয়া হলোঃ
- অল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বে মুরগি পালন।
- ছোট, বড় ও বাচ্চা মুরগি একসাথে একই ফার্মে পালন করা।
- ব্রয়লার মুরগির খামারে দুইটি সেটের মাঝখানে ফাঁকা স্থান না রাখা।
- বয়লার মুরগির শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল।
- উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু কারণে ব্রয়লার মুরগির গামবোরো রোগ সৃষ্টি হয়।
গামবোরো রোগের লক্ষণ
গামবোরো রোগের লক্ষণ সাধারণত দুই ভাগে প্রকাশ পায়।এগুলো হলো
- বাহ্যিক গামবোরো রোগের লক্ষণ
- অভ্যন্তর গামবোরো রোগের লক্ষণ
বাহ্যিক গামবোরো রোগের লক্ষণঃ
- ব্রয়লার মুরগি আস্তে আস্তে দুর্বল, ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
- ব্রয়লার মুরগি পাতলা পায়খানা করে এবং পাতলা পায়খানা সাদা চুনের নেয় দেখায়।
- ব্রয়লার মুরগি দিনের বেশিরভাগ সময় বসে থাকে এবং নড়াচড়ায় অনিচ্ছা প্রকাশ করে।
- ব্রয়লার মুরগির লোম ও পালক উসকো শুষ্ক ও নোংরা দেখায়।
- হঠাৎ করে ব্রয়লার মুরগির শারীরিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
- আকস্মিক ভাবে খামারে ব্রয়লার মুরগির মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।
- ব্রয়লার মুরগির মলদ্বার ভেজা ও নোংরা তরল যুক্ত দেখায়।
অভ্যন্তরীণ গামবোরো রোগের লক্ষণঃ
- ব্রয়লার মুরগির পায়ের রানে ছোট ছোট ছোপ ছোপ রক্তের ছিটা দেখা যায়।
- মুরগির বার্সা ফেঁপে যায় এবং বার্সা কর্তন করলে, ভিতরে জমাট বাঁধা রক্তের ছিটা দেখা দেয়।
- ব্রয়লার মুরগির কলিজা তুলনামূলক বেশ বড় ও ফ্যাকাসে দেখায়।
- ব্রয়লার মুরগির কিডনি স্বাভাবিক মুরগির তুলনায় প্রায় দেড় থেকে দুই গুণ বড় হয়।
মুরগির গামবোরো রোগের চিকিৎসা
,ব্রয়লার মুরগির গামবোরো রোগ হলে আক্রান্ত মুরগিটি ডিহাইড্রেশনে ভোগে, ফলে ব্রয়লার মুরগির শরীরে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রোলাইট এর ঘাটতি পড়ে বা অভাব দেখা দেয়। এজন্য গামবোরো রোগে আক্রান্ত মুরগিকে স্যালাইন পানি ও গুড়ের পানি খাওয়াতে হবে।ভাইরাস রোগ কে প্রথম পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও পরবর্তী পর্যায়ে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ঘটে।
তাই দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।সাধারণত ভাইরাস জনিত রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। অর্থাৎ এর প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই বেশি কার্যকর। বর্তমানে বাংলাদেশে গামবোরো রোগ প্রতিরোধের জন্য উন্নত টিকা বা ভ্যাকসিন পাওয়া যায়।
এই ভ্যাকসিন গুলো সঠিকভাবে বয়লার মুরগির শরীরে প্রয়োগ করলে, এবং উপরোক্ত বায়োসিকিউরিটি সম্পর্কিত উপদেশগুলো মেনে চললে, এ রোগ থেকে ব্রয়লার মুরগির খামারকে খুব সহজে মুক্ত রাখা যায়।
গামবোরো ভ্যাকসিনের নাম
গামবোরো একটি ভাইরাস জনিত রোগ।এ রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ বেশি কার্যকর। তাই গামবোরো রোগ প্রতিরোধের জন্য বেশ কিছু টিকা বাজারে উন্মুক্ত করা হয়েছে ।সেগুলো হলোঃ
- বার সিমন
- গামবোরে ডি-৭৮
- হিপপি গামবোরো জি এস-৯৭
- গামবোরো টেড ভক ফোর্ট
গামবোরো রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা গামবোরো রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। এবং গামবোরো রোগের লক্ষণ দেখে গামবোরো রোগ কিভাবে চিহ্নিত করবেন, আশা করি সে বিষয়ে আপনি একটি সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করেছেন। গামবোরো রোগের লক্ষণ ছাড়াও গামবোরো রোগের চিকিৎসা সম্পর্কেও এ আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছিল।
আশা করি সে সম্পর্কে আপনারা মোটামুটি অবগত হয়েছেন। অর্থাৎ গামবোরো রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পোস্টটি থেকে অবশ্যই আপনার উপকৃত হয়েছেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম কৃষি বিষয়ক আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে, আমার ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
সলভ্ এ টু জেড এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url