মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা,কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা করবেন কিভাবে? সে বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকলে, আপনি যেকোনো মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগ থেকে খুব দ্রুত আপনার মুরগিকে সুস্থ করতে পারবেন।এছাড়াও মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা,কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি মোরগ মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চান,তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
আজকের আর্টিকেলে মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা,কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার ছাড়াও আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি আপনার মুরগির খামার অথবা বাসায় পালিত মুরগিকে ফাউল টাইফয়েড রোগ থেকে মুক্ত রাখতে চান। তাহলে আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করি, মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা,কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার এর এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি উপকৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ।
সূচিপত্রঃ মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা,কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
.

ভূমিকা

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগ একটি ব্যাকটেরিয়ার জনিত সংক্রামক রোগ। আমাদের দেশে, এই রোগের কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ খামারিরা লোকসানের সম্মুখীন হন। এ রোগের মারাত্মক পরিস্থিতির শিকার হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে অনেকেই।এতে তারা অনেক লোকসানের সম্মুখীন হয়।
তাই মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা,কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ এ রোগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় প্রতিনিয়ত অনেক খামারিরা ভায়েরা তাদের খামারে প্রচন্ড পরিমাণে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে তারা তাদের খামার করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলছেন।

আপনাদের মধ্যে যারা এসব ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। আজকের আর্টিকেলে মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা,কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান,তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের কারণ

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের বাহক এবং আক্রান্ত পাখির মল এ রোগের সংক্রমণ ঘটায়।এছাড়াও আরো বেশ কিছু মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমনের হার বৃদ্ধি পায়।যেমনঃ
  • দূষিত খাদ্য
  • বন্যপ্রাণী
  • দূষিত পানি
  • ডিম
  • কীটপতঙ্গ
  • বেশ কিছু মুহূর্তে মানুষের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার ঘটে।
এ রোগ এক ধরনের গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। এ রোগ সাধারণত মধ্যবয়স্ক থেকে ডিম পাড়া পর্যন্ত সময়ে আক্রমণ করতে পারে।

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের লক্ষণ

  • রোগান্ত মোরগ- মুরগি খাদ্য খাওয়া বন্ধ করে দেয়, এবং চলাফেরার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে ও চুপচাপ বসে থাকে।
  • মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের আক্রমণের ফলে, মুরগির খামারে উচ্চ-মৃত্যুর হার দেখা দেয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে মৃত্যুর হার শতকরা ৬০%পর্যন্ত হতে পারে।
  • মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগ ডিমের মাধ্যমে সংক্রমিত হলে,ডিম থেকে ছানা ফুটানোর ট্রেতে মৃতপ্রায় মুরগির ছানা দেখা যায়।
  • এ রোগে আক্রান্ত মুরগির মলদ্বারের চারপাশে সাদা ও দুর্গন্ধযুক্ত মল লেগে থাকে।
  • মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের মারাত্মক পরিস্থিতিতে মোরগ- মুরগি হঠাৎ করেই মারা যায়।
  • এ রোগে আক্রান্ত মুরগির পায়খানা অতি দুর্গন্ধ যুক্ত সবুজ বা হলুদ বর্ণের ডায়রিয়া বা আমাশয় দেখা দেয়।
  • মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হলে, মুরগির মাথা ও মাথা ঝুঁটি বিবর্ণ এবং সংকুচিত হয়।

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগ ছড়ানোর মাধ্যম

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। এটি সালমোনেলা গ্যালিনেরাম নামক এক ধরনের গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ফলে মোরগ- মুরগির দেহে এ রোগ হয়ে থাকে।মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগ বিস্তারের বেশ কিছু মাধ্যম রয়েছে , নিচে সেগুলো পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলোঃমোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা,কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
  • আক্রান্ত মুরগির ডিমের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়, তাই বাচ্চা ফুটানো জন্য আক্রান্ত মুরগির ডিম পরিহার করতে হবে।
  • মানুষের ব্যবহারকৃত কাপড় চোপড়, এবং খামারে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি বা যন্ত্রপাতি মাধ্যমে মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের জীবাণু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বা এক খামার থেকে অন্য খামারে সংক্রমিত হয়।
  • এই রোগে আক্রান্ত মোরগ- মুরগির পায়খানা ও অন্যান্য বজ্য পদার্থ দ্বারা মুরগির খামারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যাদি, যেমন লিটার. খাদ্য, পানি দূষিত হয়। এইসব দূষিত লিটার, খাদ্য, পানি দ্বারা খামারে অবস্থিত সুস্থ মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হয়।

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগ একটি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ।আমাদের মুরগির খামারে এ রোগের প্রায় আক্রমন দেখা দেয়।আমাদের দেশে এ রোগের কারণে হাজার হাজার খামারিরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। এবং মুরগির খামার করার স্পৃহা হারাচ্ছেন।

এ রোগের সঠিক চিকিৎসা প্রদান করতে ব্যর্থ হলে, খামারের প্রায় ৫ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মুরগি মারা যেতে পারে। তাই মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা,কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা একান্ত জরুরী। নিচে এ রোগের বেশ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করা হলোঃ
  • ক্লোরামফেনিকল,জেন্টামাইসিন, এম্পিসিলিন , টেট্রাসাইক্লিন ইত্যাদি বাংলাদেশ ভেটেরিনারি মন্ত্রণালয় অনুমোদিত আরো বেশ কিছু কোম্পানির ঔষধ, বাচ্চা ফোটার দিন থেকে শুরু করে 10 থেকে 15 দিন খাদ্য বা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
  • ট্রাইমিথোপ্রিম প্লাস সালফাডায়াজিন ভেটেনারি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী (৬০+৩০০ মিল.গ্রাম)প্রতি লিটার খাবার পানিতে মিশিয়ে সাত দিন খাওয়াতে হবে।
  • সেফক্সিটিন ভ্যাকসিন প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৫০ মাইক্রোগ্রাম মাত্রায় আক্রান্ত মুরগির দেহের মাংসপেশিতে পুশ করতে হবে।
  • এবং সহায়ক চিকিৎসা হিসাবে মাল্টিভিটামিন ও মাল্টিমিনারেল ব্যবহার করলে খুব দ্রুত এর রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের ঔষধ

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের কার্যকরী ওষুধ গুলোর গ্রুপের নাম হলোঃ
  • কোট্রাইমোক্সাজোল
  • ক্লোরামফেনিকল
  • পেনিসিলিন
এসব গ্রুপের ওষুধ গুলো,মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের জন্য বেশ কার্যকরী। তবে সহায়ক চিকিৎসা বা আরো দ্রুত এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য মাল্টিভিটামিন ও মিনারেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে খুব দ্রুত এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা

  • আক্রান্ত মুরগির ডিম দিয়ে বাচ্চা ফোটানো থেকে বিরত থাকুন
  • ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর পূর্ব মুহূর্তে ইনকিউবিটর ও ডিম ফোটানোর হ্যাচারি পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন করে ডিম ফুটাতে হবে।
  • মুরগির বাসস্থান, খাদ্যর পাত্র, পানির পাত্র পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • সম্ভব হলে খামারের আশেপাশের আবর্জনা ও জঙ্গল সাফ করতে হবে।
যেহেতু এ রোগটি একটি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের দ্রুত চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায়।

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের ভ্যাকসিন

ভ্যাকসিনের নাম

সালমোনেলা গেলিনেরাম

ব্যবহারবিধি

ছয় সপ্তাহের বেশি বয়স যুক্ত মোরগ-মুরগিতে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়।প্রথম ডোজের ৩০ থেকে ৩২ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ এবং ৬ মাস পরে বুস্টার ডোজ দিতে হয়। এই vaccine মুরগির ঘাড়ের চামড়ার নিচে ০.৫ মি.লি করে ইনজেকশন দিতে হয়।

সরবরাহ

সালমোনেলা গেলিনেরাম এর প্রতি ভায়ালের ২০০ মাত্রা টিকা আছে।
মূল্য: প্রতি ভায়ালের মূল্য মাত্র ৯০ টাকা।
(বিদ্র:বিশেষ পরিস্থিতি ও সময়ের পরিবর্তনের জন্য এর দাম কম কথা বেশি হতে পারে উপরোক্ত ভ্যাকসিনের ভায়াল এর দাম ৭ই সেপ্টেম্বর ২০২০ সাল অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে)

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা,কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্ক লেখকের মন্তব্য

সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক পোল্ট্রি খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থের শিকার হচ্ছেন। এবং অনেক খামারি মুরগি পালনের প্রতি অনিহা প্রকাশ করছেন।এজন্য প্রতিনিয়ত বাজারে পল্টি মুরগির দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।সঠিক পরিচর্যা ও নিয়ম মেনে পোল্ট্রি মুরগির খামার তৈরি করলে

যেমন লাভবান হওয়া যায়, ঠিক তেমনি সঠিক পরিচর্যা ও নিয়মের অভাবে অনেক খামারীরা ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়। এর প্রধান কারণ হলো ব্রয়লার বা পোল্ট্রি মুরগি অতিরিক্ত গরম এবং প্রতিকূল পরিবেশ সহ্য করতে পারে না। যার ফলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগ।

আজকের এই আর্টিকেলে মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা,কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন,

তাহলে অবশ্যই মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা,কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার আর্টিকেল থেকে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এরকম নিত্য নতুন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সলভ্ এ টু জেড এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url