জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি-জিম্যাক্স এর উপকারিতা

জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি? এ নিয়ে রয়েছে আমাদের সমাজে নানা অভিমত। অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ছোটখাটো সমস্যায় জিম্যাক্স ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। অনেকে মনে করেন, জ্বর নিরাময়ে জিম্যাক্স ট্যাবলেট বেশ কার্যকরী। আবার কেউ কেউ মনে করেন, ব্যাকটেরিয়া ও অনুজীবের সংক্রমণ থেকে মুক্তির জন্য জিম্যাক্স ট্যাবলেট অত্যন্ত কার্যকরী।
এসব দি-মতের শিকার হয়ে অনেকেই জানতে চান, জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি? এবং জিম্যাক্স এর উপকারিতা কি। আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য, আজকের আর্টিকেলে জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি,জিম্যাক্স এর উপকারিতা কি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

আপনি যদি জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে চান, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন।
সূচিপত্রঃ জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি-জিম্যাক্স এর উপকারিতা
.

ভূমিকা

জিম্যাক্স আমাদের কাছে একটি পরিচিত নাম।জিম্যাক্স ৫০০ হলো একটি অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ, ডাক্তাররা অনেক সময় আমাদের এই এন্টিবায়োটিক ওষুধটি খেতে বলে। আমরা অনেকেই জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি? সেটা না জেনে এই অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ খেয়ে থাকি।

আজকের আর্টিকেলে আপনাদেরকে জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ ও জিম্যাক্স এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। জিম্যাক্স ট্যাবলেট বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অনুজীব দ্বারা সংক্রমিত রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এই ওষুধটির মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে এজিথ্রোমাইসিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক, যা কারণে জিম্যাক্স ট্যাবলেট ব্যাকটেরিয়া বা অনুজীবের সংক্রমণ জনিত রোগ নিরাময় করে। পাশাপাশি এসব ক্ষতিকর রোগ জীবাণু থেকে দেহকে রক্ষা করার জন্য দেহে অ্যান্টি রোগ প্রতিরোধ করে তোলে।

জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি

আজকের আর্টিকেল জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।তাহলে চলুন জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। জিম্যাক্স হলো এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ এটি সাধারণত মানুষের দেহে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস নিরাময় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

তাই আমাদের শরীরে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে ডাক্তার আমাদেরকে সর্বপ্রথম জিম্যাক্স ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে আপনার যদি জ্বর হয় তাহলে জ্বর নিরাময়ের জন্য জিম্যাক্স খাওয়া একদম উচিত নয়। তবে আপনার যদি জ্বর হওয়ার পাশাপাশি টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়া হয়,সে ক্ষেত্রে টাইফয়েড ও ম্যালেরিয়া জীবাণু ধ্বংসের জন্য জিম্যাক্স ট্যাবলেট খেতে পারেন।

জিম্যাক্স এর ব্যবহার

এজিথ্রোমাইসিন এক ধরনের সংবেদনশীল অনুজীব এর সমন্বয়ে সৃষ্টি সংক্রমণ সমূহ যেমনঃ ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া, নিঃশ্বাসতন্ত্রের সমস্যা,টনসিলাইটিস ও উর্ধ্ব শ্বাস তন্ত্রের সংক্রমণ ইত্যাদি সমস্যা নিরাময়ের জন্য জিম্যাক্স অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। তবে এটি জ্বর অথবা সর্দির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না।
বরং জ্বর সর্দির মাধ্যমে এজিথ্রোমাইসিন নামক জীবাণুর সংক্রমনের সৃষ্টি বড় কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও জিম্যাক্স আমাদের যৌনাঙ্গের ট্রাকোমাইটিস জনিত অজটিল সংক্রমণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জিম্যাক্স এর ফার্মাকোলজি

জিম্যাক্স হলো এজিথ্রোমাইসিন জাতীয় এজালাইড অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ। যা মানুষ বা প্রাণীর শরীরের গ্রাম-নেগেটিভ এবং গ্রাম-পজেটিভ ব্যাকটেরিয়া বা অনুজীবের বিরুদ্ধে কার্যকরী ঔষধ। যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অনুজীবের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে, পাশাপাশি এটি এজিথ্রোমাইসিন সংবেদনশীল ব্যাকটেরিয়া দের ক্রোমোজোম এর সাথে 50S যুক্ত হয়ে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর দেহে প্রোটিন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে।যার কারণে জীবাণু গুলো ধ্বংস হয়ে যায়।

জিম্যাক্স ৫০০ খাওয়ার নিয়ম

জিম্যাক্স ৫০০ এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট ১২ বছর বয়সের উর্ধ্বে,ছোট বড় সকলকে খাওয়ানো যাবে। তবে এটি প্রয়োগের নির্দিষ্ট মাত্রাবিধি রয়েছে। নিচে তা দেওয়া হলঃ

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জিম্যাক্স ট্যাবলেট খাওয়ার মাত্রা বিধি

  • ৫০০ মিলিগ্রাম জিম্যাক্স দৈনিক একবার করে ৩ দিন। প্রথম দিন ৫০০ মিলিগ্রাম করে এবং পরবর্তী ২ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত ২৫০ মিলিগ্রাম করে সংক্রমণ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৪ দিন খাওয়ানো যেতে পারে।
  • ক্ল্যামাইডিয়া ট্রাকোমাইটিস জনিত যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রথম দিনে ৫০০ মিলিগ্রাম জিম্যাক্স দিনে একটি করে, এবং পরবর্তী দুই দিন ২৫০ মিলিগ্রাম করে ব্যবহার করা যেতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে জিম্যাক্স ব্যবহারের নিয়ম

  • ছয় মাসের অধিক বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে, দৈহিক ওজন(১০ মিঃগ্রাঃ/ কেজি) অনুসারে প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রাম করে, তিন দিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • শিশুর শারীরিক ওজন যদি ২৬- ৩৫ কেজি হয়,তাহলে দৈনিক ৩০০ মিলিগ্রাম করে সর্বোচ্চ তিন দিন খাওয়ানো যেতে পারে।
  • শিশুর ওজন যদি ৩৬-৪৫ কেজি পর্যন্ত হয়, তাহলে দৈনিক ৪০০ মিলিগ্রাম করে আক্রান্ত শিশুকে তিন দিন পর্যন্ত খাওয়ানো যেতে পারে।
  • এছাড়াও শিশু যদি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। সেক্ষেত্রে ৫০০ মিলিগ্রাম সংক্রমনের মাত্রা অনুযায়ী ৭ থেকে ১০ দিন আক্রান্ত ব্যক্তিকে খাওয়ানো যাবে। তবে জিম্যাক্স ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করবেন।

জিম্যাক্স ওষুধের মিথস্ক্রিয়া

পাকস্থলীতে খাদ্য অথবা অ্যান্টাসিড এর উপস্থিতিতে এজিথ্রোমাইসিন এর শোষণ হার কমে যায়। তাই আরগোট অ্যালকালয়েড সেবনকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে একই সাথে জিম্যাক্স ৫০০ ট্যাবলেট ব্যবহার করা একদম উচিত নয়।
এর প্রধান কারণ হলো এজিথ্রোমাইসিন এর সাথে সাইটোক্রোম পি এর বিক্রিয়ার মাধ্যমে আরগোটিজম সৃষ্টি হতে পারে।যেহেতু মাইক্রোলাইট সমূহ সাইক্লোস্পোরিন এর মাত্রা বৃদ্ধি করে দেয়। তাই জিম্যাক্স সাথে উপরোক্ত ওষুধগুলো ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

জিম্যাক্স ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

জিম্যাক্সে রয়েছে ৫০০ মিলিগ্রাম এজিথ্রোমাইসিন । নির্দিষ্ট মাত্রা অনুযায়ী এজিথ্রোমাইসিন বা জিম্যাক্স ব্যবহার করলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তেমন লক্ষ্য করা যায় না। তবে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় জিম্যাক্স সেবনের ফলে হতে পারে ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ঘুম ঘুম ভাব, ত্বকে লাল লাল রেশ বের হওয়া ইত্যাদি।

যদিও এগুলো পরে চিকিৎসা নিলে ভালো হয়ে যায়। তবে জিম্যাক্স অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ অধিক ব্যবহারে ফলে আমাদের শরীরকে দুর্বল করে। তাই অধিক মাত্রায় জিম্যাক্স খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।

গর্ভাবস্থায় বা স্তন দানকালে জিম্যাক্স খাওয়া যাবে কি

বর্তমানে গর্ভ অবস্থার দিকে লক্ষ্য রেখে এজিথ্রোমাইসিন ‘B’ ক্যাটাগরি জিম্যাক্স ওষুধ তৈরি করা হয়েছে। যা প্রাণিজ প্রজননে নিরীক্ষরীয় ভূমিকা পালন করে। যার কারণে এজিথ্রোমাইসিন এর কোন ক্ষতিকর প্রভাব প্রেগনেন্সির ওপর পড়ছে না। তবে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে জিম্যাক্স ঔষধ ব্যবহারে পর্যাপ্ত কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আবার অন্যদিকে স্তন দান কালে জিম্যাক্স খাওয়ানো যাবে কি যাবে না এ বিষয়েও সঠিক তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। যার কারণে নবজাতক শিশুর মায়েদের স্তন দেওয়ার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এবং গর্ভাবস্থায় এজিথ্রোমাইসিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহারের জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।কারণ আজকের আর্টিকেলটি ডাক্তারের বিকল্প নয়।

জিম্যাক্স ঔষধ ব্যবহারে বেশ কিছু সতর্কতা

জিম্যাক্স একটি এন্টিবায়োটিক ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়া ও অনুজীব প্রতিরোধে এক ধরনের এজিথ্রোমাইসিন সংবেদনশীল ঔষধ। তাই এটি অন্যান্য এন্টিবায়োটিকের মতো অসংবেদনশীল ব্যাকটেরিয়া বা অনুজীব ঘটিত অতি সংক্রমণ জনিত ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে এই ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।এছাড়াও মাত্র অতিরিক্ত বৃক্কের বৈকল্যে রোগীর ক্ষেত্রেও জিম্যাক্স ঔষধ ব্যবহারে সর্বাত্মক সতর্ক থাকতে হবে।

জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি-জিম্যাক্স এর উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করি, অত্যধিক জ্বর হলে জিম্যাক্স খেতে হবে। আবার অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া জিম্যাক্স সেবন করে। জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ নিয়ে রয়েছে আমাদের সমাজে বিভিন্ন মতামত। তবে জিম্যাক্স এর কাজ কি এ বিষয়ে জানার জন্য আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়তে হবে।

আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি এ বিষয়ে আপনার সুস্পষ্ট ধারণা হয়ে গেছে।আজকের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে আপনার পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।আর্টিকেলে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সলভ্ এ টু জেড এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url